মুক্তিযুদ্ধে মুক্তাঞ্চল – আমিনুর রহমান সুলতান

মুক্তিযুদ্ধে মুক্তাঞ্চল [ আমিনুর রহমান সুলতান ] : অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে লাঠি, সড়কি, জুইত্যা ও বল্লম প্রভৃতি হাতে নেমে এসেছিল রাস্তায়। গ্রামে-গঞ্জে, শহরের বিভিন্ন মাঠে ডামি রাইফেল নিয়েই প্রশিক্ষণ শুরু করেছিল শত্রুপক্ষকে রুখে দাঁড়াবার জন্য। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে প্রতিরোধ গড়া সম্ভব হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধে মুক্তাঞ্চল - মুক্তিযুদ্ধে রৌমারী মুক্তাঞ্চল
মুক্তিযুদ্ধে রৌমারী মুক্তাঞ্চল

মুক্তিযুদ্ধে মুক্তাঞ্চল :

সারা দেশে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের কারণে এপ্রিলের মধ্যেই সংগ্রামরত মানুষের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রতিটি জেলা, মহকুমা ও থানা সদরে আক্রমণ চালায়। সংগ্রামরত মানুষের প্রতিরোধ ভেঙে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। ফলে বাংলাদেশের ছাত্র, যুবক, কৃষক ও শ্রমিক সর্বস্তরের মানুষসহ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আর শরণার্থীরূপে তারা আশ্রয় গ্রহণ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কর্মী ও সংগ্রামরত ছাত্র-জনতা ভারতের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য তাই শরণার্থী শিবির থেকে যুব শিবির প্রতিষ্ঠা করা হয়।

পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানোর পর সারা দেশের জেলা ও থানা পর্যায়ে তাদের ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। তবে উত্তাল মার্চ থেকে শুরু করে বিজয় অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত কয়েকটি অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশ করতে পারেনি এবং তাদের এদেশীয় দোসররাও কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেনি।

এসব অঞ্চলই মুক্তাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের মুক্তাঞ্চলসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তৎকালীন দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার তেঁতুলিয়া থানা (বর্তমানে পঞ্চগড় জেলাধীন), তৎকালীন রংপুর জেলার পাটগ্রাম (বর্তমানে লালমনিরহাট জেলাধীন) ও রৌমারী থানা (বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলাধীন, ৪ আগস্ট থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এই কয়েকদিন ব্রহ্মপুত্র নদ পরিবেষ্টিত শুধু কোদালকাটি ইউনিয়নটি পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে ছিল)।

অবশ্য আরও কয়েকটি মুক্তাঞ্চলের নাম উল্লেখযোগ্য, বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীর চর, নয়ারহাট, অষ্টমীর চর– এই চরাঞ্চলের অবস্থান ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব ও ব্রহ্মপুত্রের মাঝখানে, যা চিলমারীর অর্ধেক অংশ; ভুরুঙ্গামারীর দুধকুমার নদীর পূর্ব পাড়ের বঙ্গ সোনাহাট, বলদিয়া, চর ভুরুঙ্গামারী, পাইকের ছড়া ইউনিয়ন–যা ভুরুঙ্গামারীর অংশবিশেষ; নাগেশ্বরীর ব্রহ্মপুত্রের পূর্বপাড়ের নারায়ণপুর, দুধকুমার নদীর পূর্বপাড়ের কচাকাটা, কেদার, বল্লভের খাস নাগেশ্বরীর অংশবিশেষ; উলিপুরের বেগমগঞ্জ এর আয়তন উলিপুরের অর্ধেক বলা যায়; ফুলবাড়ি থানার সকল ইউনিয়ন। তেঁতুলিয়া, রৌমারী-রাজিবপুর ও পাটগ্রাম এই তিনটি মুক্তাঞ্চলের বর্ণনা তুলে ধরা হলো।

১. তেঁতুলিয়া মুক্তাঞ্চল

মুক্তিযুদ্ধের সময় দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার অন্যান্য থানার মধ্যে অন্যতম দুটি থানা ছিল পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়া। এই দুই থানা মিলে সত্তরের জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনী এলাকা ছিল একটি। একজন এমএনএ ও একজন এমপিএ প্রতিনিধি ছিল দুই থানার নির্বাচনী এলাকায়। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত এমএনএ ছিলেন মোশাররফ হোসেন চৌধুরী ও এমপিএ ছিলেন কমরুদ্দিন আহমেদ মোক্তার।

দুটি থানা মিলে একটি আসন হলেও পঞ্চগড় থেকেই রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হতো। অসহযোগ আন্দোলনে পঞ্চগড়ে যে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয় তাতে সভাপতি ছিলেন কমরুদ্দিন আহমেদ মোক্তার ও সম্পাদক ছিলেন অ্যাডভোকেট বশিরুল আলম। অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে মোশাররফ হোসেন এমএনএ ও সিরাজুল ইসলাম এমপিএও ছিলেন। পঞ্চগড়ের সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন নাজিমুদ্দিন আহমদ ও সম্পাদক ছিলেন এস.এম. লিয়াকত আলী।

আরও পড়ুন:

তেঁতুলিয়ার সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী হবিবুর রহমান এবং সম্পাদক নির্বাচিত হন থানা আওয়ামী লীগের সম্পাদক আব্দুল জব্বার। কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন কামরুল হোসেন, কামু, নাজির হোসেন, খুরশিদ আলম, আলম আকবর, আইয়ুব আলী, হাসান আলী, লুৎফর রহমান, খাদেম আলী, ওয়াহিদ হোসেন প্রমুখ।

আর ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র লীগের নেতৃবন্দসহ যুব নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন সুলতান আলম, কাজী মাহবুবুর রহমান, জহুরুল হক, মমতাজ উদ্দীন, শফিউদ্দিন সিদ্দিকী, আবুল হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, আবদুল মান্নান, কাজী ফারুক আজম, আতাউর রহমান, জাহিদুল হক, ইয়াছিন আলী, ফজলুল হক, নাইবুল ইসলাম, আতিয়ার রহমান প্রমুখ।

তেঁতুলিয়া মুক্তাঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার সময় থেকে অগ্রগণ্য হিসেবে মুক্তাঞ্চল ছেড়ে কখনও অন্যত্র যাননি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম এমপিএ। যদিও তিনি ছিলেন ঠাকুরগাঁও আংশিক, দেবীগঞ্জ ও আটোয়ারীর সমন্বয়ে গঠিত প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধি।

পঞ্চগড় শহরের পতনের একদিন আগে তেঁতুলিয়ায় এসেছিলেন। আসার সময় তিনি শহরের হাবিব ব্যাংক, কো-অপারেটিভ ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছিলেন। ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় পতনের সঙ্গে সঙ্গেই মুক্ত এলাকা তেঁতুলিয়ায় রংপুর, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও থেকে পিছুহটা বিপুল সংখ্যক আনসার, মুজাহিদ, ইপিআর, সেনা-নৌ এবং বিমানবাহিনীর সদস্য উপস্থিত হন।

মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন করছেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ
মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন করছেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ

শুধু তাই নয়, তাদের সঙ্গে সামরিক-আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের পরিবারের পাশাপাশি প্রায় ২০ হাজার শরণার্থীর উপস্থিতি ঘটে এ অঞ্চলে। অবশ্য পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও থেকে ১০৬টি ইপিআর পরিবারকে নিরাপত্তার জন্য প্রথমে তেঁতুলিয়া এবং সেখান থেকে বাংলাবান্ধা পাঠানো হয়। তবে বাকি সাধারণ জনগণ, সরকারি কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাঁদেরকে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দেয়া হয়। আশ্রয়ের পাশাপাশি তাদেরকে নিয়মিত দেওয়া হয় রেশন।

১৯ এপ্রিল পঞ্চগড় পতনের পর সুবেদার মেজর কাজিম উদ্দিন তাঁর দলের ইপিআরদের সঙ্গে নিয়ে তেঁতুলিয়ায় অবস্থান নেন। অবশ্য এর আগে তাঁর নেতৃত্বে ২৮ মার্চ তারিখে ঠাকুরগাঁও শহরের তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্পের বিদ্রোহ ও ক্যাম্প দখলকে কেন্দ্র করে মুক্তিকামী জনগণের মধ্যে সংগ্রামের চেতনা জন্ম নিয়েছিল।

২ এপ্রিল তারিখে তাঁর প্রাক্তন পাকিস্তানি কমান্ডিং অফিসার অবসরপ্রাপ্ত মেজর এ.টি. হোসেন মুক্তিকামী যোদ্ধাদের সাথে একত্রে কাজ করতে চাইলে তিনি দায়িত্ব পান এবং সম্মুখযুদ্ধে যোগ দেন। পরবর্তী দিনাজপুর-সৈয়দপুর সড়কের উপর ৪ এপ্রিল ভূষিরবন্দর, ৫ এপ্রিল সৈয়দপুর-নীলফামারী সড়কের পাশে ও দারোয়ানীতে প্রতিরক্ষাব্যূহ গড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মোকাবিলার কাজ চলে, যা ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর ছিল।

২০ এপ্রিল করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে ভজনপুরে সুবেদার হাফিজ একদল ইপিআর নিয়ে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় গড়ে তোলেন একটি ডিফেন্স। অবশ্য সুবেদার আহমদ হোসেনও এ সময়ে ছিলেন বলে জানা যায়।

অসহযোগ আন্দোলনের শুরু থেকেই এই অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ জনতার ভূমিকা ছিল খুবই আশাবাদী। ১৯ এপ্রিলের পর তাঁদের ভূমিকা পালন আরও গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। এপ্রিলের শেষের দিকে গঠন করা হয় ‘স্থানীয় প্রতিরোধ কমিটি’ (Local Defence Committee)। এই কমিটিতে ছিলেন-

১. অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, এমপিএ (সভাপতি)

২. কমর উদ্দিন আহমেদ মোক্তার (সহ-সভাপতি)

৩. ফজলুল করিম এমপিএ (ঠাকুরগাঁও)

৪. অ্যাডভোকেট আজিজার রহমান (সহ সভাপতি, দিনাজপুর)

৫. ডা. শেখ ফরিদ আহমেদ (সেক্রেটারি)

৬. আলী মর্তুজা (জয়েন্ট সেক্রেটারি)

৭. কাজী হবিবুর রহমান (তেঁতুলিয়া)

৮. আবদুল জব্বার (তেঁতুলিয়া)

৯. আইয়ুব আলী (তেঁতুলিয়া)

১০. ডা. আতিয়ার রহমান (তেঁতুলিয়া)

১১. আকবর হোসেন (ঠাকুরগাঁও)

১২. আবদুর রশিদ মোক্তার (ঠাকুরগাঁও)

১৩. আবদুল লতিফ মোক্তার (ঠাকুরগাঁও)

১৪. অধ্যাপক আফতাব (ঠাকুরগাঁও)

১৫. অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম (ঠাকুরগাঁও)

১৬. অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ (ঠাকুরগাঁও)

১৭. সুবেদার মেজর কাজিমউদ্দিন (ইপিআর)

১৮. নায়েব সুবেদার আবুল হাসেম (ইপিআর)

১৯. নায়েব সুবেদার মতিয়ার রহমান (ইপিআর)

২০. নায়েব সুবেদার হাফিজ উদ্দিন (ইপিআর) প্রমুখ।

সুবেদ আলী ভূঁইয়া (ইপিআর) এই কমিটিতে ছিলেন বলেও জানা যায়। শুধু তাই নয়, এ কমিটিকে সক্রিয়ভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। এ উপদেষ্টা কমিটি তেঁতুলিয়া থানার সমস্ত অস্ত্র তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে এবং স্থানীয়ভাবে যুবকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা ও ভারতে যুবকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্দেশ্যে একটি রিক্রুটিং ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।

তেঁতুলিয়ার মুক্তাঞ্চল গড়ে উঠার শুরুতে “সিরাজুল ইসলাম এমপিএ, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জব্বার এবং তেঁতুলিয়ার তৎকালীন সিও (ডেভ) মতিউর রহমান প্রথম থেকেই জনপ্রশাসন বা সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালু রাখার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সিও (ডেভ) মতিউর রহমান সর্বপ্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাঁর আনুগত্য প্রকাশ করে ডিকলারেশন ফরমে স্বাক্ষর করেছিলেন ও তাঁর অফিসের সকলকে সেই ফরমে স্বাক্ষর করার নির্দেশ দেন।

ফলত সে সময় তেঁতুলিয়া থানার মোট ৫৬ জন কর্মচারীর মধ্যে ৫৪ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী আনুগত্য স্বীকার করে পরবর্তী বেতন প্রাপ্তির আবেদন জানান।”* বাংলাদেশের প্রথম সরকারের আনুগত্য যেসব সরকরি কর্মকর্তা ও কর্মচারী স্বীকার করেছিলেন তাঁদের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

১. এস.এম. মতিউর রহমান, সিও (উন্নয়ন)

২. সুশীলচন্দ্র দাস, সিও (উন্নয়ন) সহকারী

৩. নাজিমউদ্দিন, সিও (উন্নয়ন) সহকারী

৪. রহমান, সুপারভাইজার, সিও (উন্নয়ন)

৫. মজিদ উদ্দীন, সিও (রাজস্ব) অফিস

৬. আবদুল হালিম, সহকারী, সিও (রাজস্ব) অফিস

৭. সাইদুর রহমান, তহশিলদার

৮. আবদুল খালেক, তহশিলদার

৯. আজিজ উদ্দীন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, সওজ

১০. মশিউদ্দীন, কৃষি বিভাগ প্রমুখ।

এ সময় জনপ্রশাসন চালু ও মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে কার্যক্রম চালু করেন সিরাজুল ইসলাম এমপিএ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ মতিউর রহমান সিও (ডেভ)। শুধু তাই নয়, তারা কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে এবং মুক্তাঞ্চলকে পরিকল্পনামাফিক পরিচালনার জন্য কয়েকটি নীতি-নির্ধারণী পদক্ষেপও গ্রহণ করেন। পদক্ষেপগুলো হলো:

ক. মুক্ত এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা।

খ. তেঁতুলিয়া থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বাছাই করার জন্য প্রাথমিক ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করা ও শরণার্থী শিবির থেকে যুবকদের সংগ্রহ করে নিয়ে আসা।

গ. মুক্তিযোদ্ধাদের যাতে কোনো খাদ্যঘাটতি না পড়ে তার ব্যবস্থা করা।

ঘ. চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করা।

ঙ. মুক্ত এলাকায় মানুষের মনে আস্থা, মনোবল, সাহস ও দেশপ্রেম জাগ্রত রাখা।

চ. মুক্তিযোদ্ধাদের যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা সচল রাখা।

ছ. মুক্ত এলাকায় বিভিন্ন গুদামে রক্ষিত খাদ্যদ্রব্য ও কৃষিজ সামগ্রীর হেফাজত করা।

জ. অবরুদ্ধ এলাকার খবরাখবর প্রাপ্তিতে গোপন ব্যবস্থা করা।

ঝ. ভারত থেকে সহজ উপায়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রী এনে তা বাজারজাত করণের ব্যবস্থা করা।

ঞ. ভারতীয় বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত ও প্রাপ্য সাহায্য সামগ্রীর সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও বিতরণের ব্যবস্থা করা।

ট. তথ্য ও সংবাদ প্রেরণের জন্য ডাক চলাচলের ব্যবস্থা করা।

ঠ. এলাকার সব মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থী শিবির থেকে সংগ্রহ করা যুবক ও সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের যথাযথ তালিকা প্রণয়ন করা।

ড. ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তাঞ্চল দেখতে আসা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সমাজকর্মী ও দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনাসহ যথাযথ তথ্য প্রদানের ব্যবস্থা করা। ১

২৫ মার্চের পর ইপিআর ক্যাম্পগুলোতে যে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে সে ক্যাম্পগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল তেঁতুলিয়ার বিওপি ইপিআর ক্যাম্পগুলো। ব্যতিক্রম এ জন্যেই যে, অবাঙালি ইপিআররা কোনো প্রভাবই বাঙালি ইপিআর-এর ওপর বিস্তার করতে পারেনি। বরং স্থানীয় আন্দোলনরত সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও ছাত্র-জনতার সহযোগিতায় বাঙালি ইপিআররা তেঁতুলিয়ার সবকটি বিওপির অবাঙালি ইপিআরদের হত্যা করতে সমর্থ হয়েছিল। তেঁতুলিয়া বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী অঞ্চল।

তেঁতুলিয়ার ভৌগোলিক সীমানা এরকমই যে, এর পশ্চিমে ভারত, উত্তরে ভারত, দক্ষিণে ভারত, কেবল দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের অবস্থান। ফলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তেঁতুলিয়া প্রবেশের জন্য একটি মাত্র পথই খোলা ছিল– তা হলো পঞ্চগড় হয়ে অগ্রসর হওয়া। তেঁতুলিয়া মুক্তাঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠার ক্ষেত্রে ভৌগোলিক পরিবেশ ছিল তার অনুকূলে। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ার দিকে যে রাস্তাটি অগ্রসর হয়েছে তার উত্তর দিকে খুব কাছেই ভারতের সীমান্ত, দক্ষিণ দিকেও ভারতের সীমান্ত বেশি দূরে নয়।

এ ছাড়াও তেঁতুলিয়া প্রবেশের মুখে প্রথমেই রয়েছে চাওই নদী। এ নদী পার হয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে আবার করতোয়া নদী। করতোয়ার পশ্চিমপাড় সংলগ্ন ভজনপুর থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ভারতীয় সীমান্ত থেকে প্রতি আক্রমণের ভয়ে এবং চাওই ও করতোয়া পার হয়ে তেঁতুলিয়া প্রবেশ করে আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে তেঁতুলিয়া টিকিয়ে থাকা সম্ভব ছিল না। ফলে পাকিস্তানি বাহিনী পঞ্চগড়ে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি করার পর চাওই নদীর তীরবর্তী অমরখানা নামক জায়গাতেই উত্তরাঞ্চলের সর্বশেষ ও অগ্রসর ঘাঁটি স্থাপন করে।

মুক্তিযুদ্ধকে সু-সংগঠিতভাবে পরিচালনার জন্য ১১টি সেক্টর গঠন করা হলে, সেক্টর গঠনের সঙ্গে সঙ্গে সেক্টর এলাকার সাংগঠনিক কাঠামোও তৈরি করা হয়। ৬ নম্বর সেক্টরের এলাকা নির্ধারণ করা হয় বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, একমাত্র ৬ নম্বর সেক্টরের সদর দপ্তর ও সাব-সেক্টরসমূহ দেশের মাটিতে গড়ে উঠেছিল। এর হেড কোয়ার্টার : বুড়িমারী, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট মহকুমার থানা); সেক্টর কমান্ডার : উইং কমান্ডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার (জুন থেকে ডিসেম্বর)। যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে এই সেক্টরকে ৫টি সাব-সেক্টরে ভাগ করা হয়।

তেঁতুলিয়া ভজনপুর এলাকায় গড়ে ওঠে ১ নং সাব-সেক্টর। সাব-সেক্টরের এলাকা নির্ধারণ করা হয়- ময়নাগড়, জগদলহাট, চাওই নদী পর্যন্ত, বোদা, অমরখানা, তেঁতুলিয়া ইত্যাদি।

সাব-সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন— ক্যাপ্টেন নজরুল হক, স্কোয়াড্রন লিডার সদর উদ্দিন, ক্যাপ্টেন সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান (তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন)। মুক্তিযোদ্ধারা করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজের পশ্চিম পার্শ্বের কিছু অংশ ভেঙে দিয়ে নদীর পশ্চিম তীর সংলগ্ন ভজনপুর এলাকায় ডিফেন্স গড়ে তুলেছিল।

সামরিক গুরুত্বের দিক থেকে ৬ নম্বর সেক্টর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ, বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের এই অঞ্চলটি ছিল চীন, ভুটান ও নেপাল সীমান্তের নিকটে। ভারতের পূর্বাঞ্চলের ৭টি প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, মিজোরাম, আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুর, নাগাল্যান্ড প্রভৃতির সঙ্গে কেন্দ্রের ছিল যোগাযোগের একমাত্র উপায় শিলিগুড়ি করিডোর– যা পঞ্চগড়ের খুবই নিকটে অবস্থিত।

এই করিডোর কোনো কারণে হাতছাড়া হলে ভারতের সমগ্র পূর্বাঞ্চল কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। একদিকে পাকিস্তানের বন্ধু অন্যদিকে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র চীনের সীমান্ত এখানকার খুবই নিকটবর্তী হওয়ায় এবং সীমান্তে চীনের সেনা অবস্থান ভারতকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করেছিল। অন্যদিকে, পাকিস্তানও ঠিক একই কারণে এ অঞ্চলে যথেষ্ট সেনাশক্তি মোতায়েন করেছিল।

সাব-সেক্টর তেঁতুলিয়ায় আগে থেকেই মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষের অবস্থান ছিল। এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সড়ক ও রেল উভয় পথই উপযোগী ছিল। “তেঁতুলিয়ার বর্ধিতাংশের তিন দিকেই ভারতীয় সীমানা। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এখানে ছিল অনুকূল পরিবেশ। এ সাব-সেক্টরের হেড কোয়ার্টারও ছিল ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি।

তেঁতুলিয়ার সীমান্তের খুব নিকটেই ছিল চীনের সীমানা। খবর রটেছিল যে, চীন পাকিস্তানের সাহায্যার্থে তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড়ের এই পথ ধরেই অগ্রসর হচ্ছে। সেটা যাতে কোনো মতেই বাস্তবায়িত হতে না পারে সেজন্য ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী প্রথম সুযোগেই এ অঞ্চলকে আয়ত্তে নিয়ে আসার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। যুদ্ধের শুরু থেকেই মুক্তিবাহিনী এখানে যথেষ্ট দাপটের সঙ্গে পাকিস্তানিদের মোকাবেলা করেছে। যৌথবাহিনীর চূড়ান্ত অভিযানের সময়েও তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুরের পথ ধরেই পাকিস্তানিদের প্রতি আক্রমণটি করা হয়েছিল।”১২

মুক্তাঞ্চলের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয় তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। তেঁতুলিয়া থানায় যেসব হাট ছিল, সেসব হাটগুলো থেকে টোল আদায় করে শরণার্থীদের সাহায্যে ব্যয় করা হতো।

মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন করছেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ
মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন করছেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ

মুক্তাঞ্চলে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তি ও গণমাধ্যম প্রতিনিধি:

মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতাকামী জনতার জন্য মুক্তাঞ্চল ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য এসেছেন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও ভারতের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ।

৯ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামান উত্তরাঞ্চল পরিদর্শনকালে তেঁতুলিয়া মুক্তাঞ্চলে তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্পের সামনে অভিবাদন গ্রহণ শেষে একটি মূল্যবান ভাষণ প্রদান করেছিলেন। ১৩

৪ জুলাই মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানী এবং তৎকালীন সেক্টর কমান্ডার এম. কে. বাশারসহ ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাও তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন। অবশ্য সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খানও সঙ্গে ছিলেন।

১৭ জুলাই থেকে তিনি এই সাব-সেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে ভাষণ দিতে এসেছিলেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, মাহবুব আলম চাষী, রাশেদ মোশাররফ, নূরে আলম সিদ্দিকী, ডা. মোজাম্মেল হক, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামও এসেছিলেন অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে। ১৪

ভারতের সহায়তাদানকারী বিভিন্ন প্রদেশের নেতৃবৃন্দও এ মুক্তাঞ্চল পরিদর্শনে এসেছেন। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী করপুরী ঠাকুর, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উপদেষ্টা ড. ত্রিগুনা সেন, ত্রাণমন্ত্রী আর. কে. খালিদকার, পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী সন্তোষকুমার রায়, শিলিগুড়ির এমএলএ অরুণ মৈত্রসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ১৫

মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বজনমত আদায়ের জন্য এবং যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জোগানোর জন্য বেতার ও সংবাদপত্রে সংবাদ প্রচার ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশি-বিদেশি প্রচার মাধ্যমগুলো এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। তেঁতুলিয়ার মুক্তাঞ্চলেরও সংবাদ পরিবেশন করে ভূমিকা পালন করেছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, ভারতের কলকাতার আকাশবাণী, শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির বেতার কেন্দ্র, যুক্তরাজ্যের বিবিসি, যুক্তরাষ্ট্রের ভয়েস অব আমেরিকা।

এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের অমৃতবাজার, আনন্দবাজার, যুগান্তর, কালান্তর, যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকাসহ সোভিয়েত রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভেনেজুয়েলা, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া প্রভৃতি দেশের সংবাদপত্র বিভিন্ন সময়ের এই মুক্তাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পরিবেশন করেছে। মুক্তাঞ্চলে অবস্থান করে সংবাদ ও তথ্য সংগ্রহ করেছেন মার্কটালি, উইলিয়াম, ডেভিড লোশাক, হরিরা গুপ্ত, শ্রীঅরবিন্দ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য সংবাদিকগণ। ১৬

মুক্তাঞ্চলে রাজস্ব আদায়

এ মুক্তাঞ্চলে প্রশাসন চালু হওয়ায় রাজস্ব আদায় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। বাজারগুলো থেকে টোল আদায়ের মাধ্যমে ব্যয় মেটানো হতো। তেঁতুলিয়া থানায় কয়েকটি স্থানে হাট বসতো সপ্তাহে এক বা দুইদিন। টোল আদায়ের উৎস ছিল হাটগুলো। উল্লেখযোগ্য হাটগুলো ছিল–তেঁতুলিয়া, শালযাহান, ভজনপুর, পাগলী হাট, রনচণ্ডি, দেবনগর, তিরনই হাট, কালান্দীগঞ্জ প্রভৃতি। বাজার থেকে আদায়কৃত টাকা প্রদান করা হতো। আশ্রিতদের মধ্যে।

মুক্তাঞ্চলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা

মুক্তিযুদ্ধের সময়ও চিঠিপত্রের মাধ্যমে দূরে বসবাসকারী আত্মীয়স্বজনের কুশলাদি ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জানা যায়। ফলে তখনও ডাক যোগাযোগের চাহিদা ছিল। তাই এ মুক্তাঞ্চলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাপতিয়াগঞ্জের মাধ্যমে ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হয়েছিল। হাপতিয়াগঞ্জের অবস্থান তেঁতুলিয়া বন্দরের পশ্চিম প্রান্তে। মহানন্দার দক্ষিণ তীর ধরে পায়ে হেঁটে মাত্র ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পথ।

ডাকব্যবস্থা ছাড়াও টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থাও করা হয় এ মুক্তাঞ্চলে। তেঁতুলিয়ায় ছিল একটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস। এই টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সাথে সংযোগ দেওয়া ছিল সরকারি অফিসগুলোতে আর সাধারণ কয়েকজন গ্রাহকের সংযোগ পাওয়ার জন্য সাহায্য নিতে হতো পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও অফিসের। এই তেঁতুলিয়া থেকে সরাসরি কল করা যেতো না।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তেঁতুলিয়া এক্সচেঞ্জ অফিসের অপারেটর পালিয়ে গেলেও শিক্ষার্থী কাজী ফারুক আজমের সহযোগিতায় চালু রাখা সম্ভব হয়। এ ব্যাপারে এই এক্সচেঞ্জটি শিলিগুড়ির ডিপ হেড কোয়ার্টারের সাথে সংযোগ রক্ষা করতে গুরুত্ববহ ছিল। কারণ, ‘শিলিগুড়ি ডিপ হেড কোয়ার্টার থেকে ফ্রন্ট লাইনের বাংকারগুলোতে টেলিফোন সংযোগের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।

এই এক্সচেঞ্জ থেকে মুক্তাঞ্চলের ডাকবাংলো, বেসামরিক প্রশাসন ভবন, ফ্রন্ট লাইনের বাংকারে টেলিফোন সংযোগ দেয়া হয়।১৭ কাজী ফারুক আজমের ভাষ্যমতে এক্সচেঞ্জটিতে আরও একজন পরবর্তী সময়ে তাকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি হলেন তাঁর বন্ধু তেঁতুলিয়া থানার কনস্টেবল আফাজউদ্দিন মদুল। ১৮

 

মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন করছেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ

 

মুক্তাঞ্চলে চিকিৎসাব্যবস্থা

তেঁতুলিয়া থানা সদরে ছিল সদর থানা হেলথ কমপ্লেক্স ও দাতব্য চিকিৎসালয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর মুক্তাঞ্চলে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রূষার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে একটি অস্থায়ী হাসপাতালের। থানার পাশেই একটি টিনের ঘরে যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্থাপিত হয় একটি ফিল্ড হাসপাতাল। এই হাসপাতাল চালু হয়েছিল সদর থানা হেলথ কমপ্লেক্স ও দাতব্য চিকিৎসালয়ের যৌথ উদ্যোগে। শুরু হয়েছিল ১০টি বেড নিয়ে। পরে তা বাড়ানো হয় ৫০টি বেডে।

ফিল্ড হাসপাতালটির পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন পঞ্চগড় সুগার মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. আতিয়ার রহমান। তাঁকে সহযোগিতা করেন কম্পাউন্ডার মনসুর আলী ও কম্পাউন্ডার সেলিম। মে মাসে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। জুন মাস নাগাদ সেবাদানের জন্য আরও যাঁরা যুক্ত হন তাঁরা হলেন-শিক্ষার্থী ডাক্তার হাসিনা বানু, নার্স সালমা ও রোকেয়া এবং সহকারী তফিজ উদ্দিন। ”

একটি হাসপাতালের জন্য খুবই জরুরি হয়ে পড়ে একটি অ্যাম্বুলেন্সের। তারও সমাধান হয়েছিল। পঞ্চগড় হেলথ কমপ্লেক্সের ছিল একটি জিপগাড়ি। এটিই অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এর চালকের দায়িত্ব পালন করেছেন মো. ইউনুস।

ফিল্ড হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবায় রত ডাক্তার, নার্স ও সহকারীবৃন্দ ফিল্ড হাসপাতালের আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করা ছাড়াও যুদ্ধক্ষেত্রেও ঘুরে ঘুরে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।

ফিল্ড হাসপাতালে ঔষধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন ভারতীয় সরকার। ফিল্ড হাসপাতালটিতে প্রয়োজন অনুসারে যে সব মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হতো না, তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হতো ভারতের বাগডোগরা হাসপাতালে।

মুক্তাঞ্চলে ‘সাপ্তাহিক সংগ্রামী বাংলা’:

মুক্তিযুদ্ধের সময় যে কোনো স্থান থেকেই যে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছে সে সব সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধের নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে যা মুক্তিযুদ্ধের দর্পণস্বরূপ।

তেঁতুলিয়া মুক্তাঞ্চল থেকেও প্রকাশিত হয়েছে ‘সাপ্তাহিক সংগ্রামী বাংলা’ নামের সংবাদপত্র। পত্রিকাটি প্রথম সংখ্যার প্রকাশকাল ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। পত্রিকাটি ছাপা হতো শিলিগুড়ির শ্রী আর্ট প্রেস থেকে। পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাংবাদিক মো. এমদাদুল হক। ট্যাবলয়েড আকৃতির দশ পয়সা মূল্যের এই পত্রিকাটির মুদ্রিত পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল চার বা ছয় পৃষ্ঠার। মূল্য মাত্র দশ পয়সা। কয়েকটি সংখ্যা নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছিল।

মুক্তাঞ্চলে সর্বশেষ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয় ২৩ নভেম্বর। এটি ছিল ‘ঈদ’ বিশেষ সংখ্যা। পত্রিকাটি প্রকাশের ব্যাপারে সম্পাদক নিজেই উদ্যোগী হয়ে কথা বলেছিলেন সিরাজুল ইসলাম এমপি, আবদুল জব্বার, কাজী হবিবুর রহমান ও শফিউদ্দিন সিদ্দিকীর সঙ্গে। পত্রিকাটিতে ছাপা হতো ‘যুদ্ধের খবরাখবর, গেরিলা তৎপরতা ও সাফল্যের কথা উল্লেখযোগ্য খবর সংকলিত হতো—স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা। এছাড়াও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দোসর শান্তি কমিটি ও হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের ঘটনা। ২১

মুক্তাঞ্চলে সেক্টর ও সাব-সেক্টর হেড কোয়ার্টার:

মুক্তাঞ্চল তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতে ৬ নম্বর সেক্টরের হেড কোয়ার্টার স্থাপিত হয়েছিল জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে। সেক্টর কমান্ডার এম.কে. বাশার তখন থেকে ভারতের মিত্রবাহিনীর ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। শুধু তাই নয়, এ মুক্তাঞ্চলে প্রতিষ্ঠা পায় যুব ও ট্রানজিট ক্যাম্প।

তবে যুদ্ধের পরিস্থিতি ও কৌশলগত অবস্থান পাল্টানোর জন্যে হেড কোয়ার্টারের স্থান পরিবর্তন হয় রংপুরের ভুরুঙ্গামারীতে। অবশ্য হেড কোয়ার্টারের স্থান পরিবর্তন হলেও এম.কে. বাশার রণ-কৌশল ও প্রয়োগের জন্য যে পরিকল্পনা তা তেঁতুলিয়ার মুক্তাঞ্চলে বসেই নিতেন। এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল—ভারতের মিত্রবাহিনীর সঙ্গে সহজ যোগাযোগ।

মুক্তাঞ্চল তেঁতুলিয়াকে সমকালীন বাংলাদেশের রাজধানী বানানোর আকাঙ্ক্ষাও ব্যক্ত করেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী। ২২ সাব-সেক্টরের হেড কোয়ার্টারও তেঁতুলিয়া মুক্তাঞ্চলেই ছিল। তবে এরও স্থানান্তর ঘটে। স্থানান্তর ঘটার পেছনে দুটি কারণ বলে গবেষকবৃন্দ মত দিয়েছেন।

১. কৌশলগত কারণ, ২. মুক্তিযুদ্ধের অগ্রাভিযানের প্রয়োজনে। তবে হেড কোয়ার্টারের মতো পরিবর্তিত স্থান ভুরুঙ্গামারীতে নয়। তেঁতুলিয়ারই কাছাকাছি স্থান ভজনপুরের ব্রাহ্মণপাড়ায়। আর এ সময় এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষকেও অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। “এ সাব সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ক্রমান্বয়ে স্কোয়াড্রন লিডার সদরুদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন নজরুল হক, এবং বাংলার বিচ্ছু নামে খ্যাত ক্যাপ্টেন সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান।

৬/এ সাব-সেক্টর কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার সদরুদ্দিন প্রথমদিকে তেঁতুলিয়া থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। পরবর্তীকালে ভজনপুরের ব্রাহ্মণপাড়ায় হেড কোয়ার্টার স্থাপন করলেও খাদ্য ও রসদ সরবরাহ এবং যোগাযোগের জন্য তেঁতুলিয়ার ওপর নির্ভরশীল থাকতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তেঁতুলিয়ায় অবস্থান করে এবং এখান থেকেই মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করে। ২৩

২. রৌমারী-রাজিবপুর মুক্তাঞ্চল

৩. পাটগ্রাম মুক্তাঞ্চল

 

তথ্যনির্দেশ:

১. এস. এম. আব্রাহাম লিংকন, মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস রংপুর, বাংলা একাডেমি, ঢাকা ২৫৫

২. সাক্ষাৎকার: শফিকুল ইসলাম, পিতা: আবদুল আজিজ, মাতা সুফিয়া খাতুন, মিঠাপুকুর, পঞ্চগড় সদর, কলেজ, পঞ্চগড়, তারিখ: ৭ জানুয়ারি, ২০১৪, সময় বিকাল ৫ টা।

৩. সাক্ষাৎকার : মোহাম্মদ এমদাদুল হক, তেঁতুলিয়া মুক্তাঞ্চলের খাদ্যগুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, সাংবাদিক সাংস্কৃতিককর্মী, তারিখ: ১২.১২.২০১৪, সময় সন্ধ্যা ৬টা, মতিঝিল, ঢাকা

৪. মোহাম্মদ এমদাদুল হক, একাত্তরের মুক্তাঞ্চল, তেঁতুলিয়ার ইতিহসাস ও দলিলপত্র। জনপ্রিয় প্রকাশনী, ঢাকা, মার্চ, ২০১৫, ৪০

৫. সাক্ষাৎকার মোহাম্মদ এমদাদুল তেঁতুলিয়া মুক্তাঞ্চলের খাদ্যগুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিককর্মী, তারিখ: ১২.১২.২০১৪, সন্ধ্যা ৬টা, মতিঝিল, ২০১২

৭. সাক্ষাৎকার মোহাম্মদ এমদাদুল হক, তারিখ ১২.১২.২০১৪, সময় সন্ধ্যা ৬টা, মতিঝিল, ঢাকা

৮. বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ছয় (বৃহত্তর রংপুর জেলা এবং দিনাজপুর জেলার বৃহদাংশ), গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মার্চ ২০০৬, পৃ. ১১৫

৯. মোহাম্মদ এমদাদুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭৩

১০. মোহাম্মদ এমদাদুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭৩-৭৪ বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ছয়, পৃ. ১২৯

১২. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩১

১৩. সাক্ষাৎকার : মোহাম্মদ এমদাদুল হক, তারিখ: ১২.১২.২০১৪, সময় : সন্ধ্যা ৬টা, মতিঝিল, ঢাকা

১৪. সাক্ষাৎকার: মোহাম্মদ এমদাদুল হক, তারিখ: ১২.১২.২০১৪, সময় : সন্ধ্যা ৭টা ১৫. আইয়ুব হোসেন, চারু হক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৮

১৬. প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৮

১৭. আইয়ুব হোসেন, চারু হক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৪ ১৮. মোহাম্মদ এমদাদুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৯০

১৯. ঐ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮৭

২০. আইয়ুব হোসেন, চারু হক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৩

২১. প্রাগুক্ত, পৃ. ৯৩

২২. আইয়ুব হোসেন, চারু হক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৪-৫৫ ২৩. প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৪-৫৫

২৪. সাক্ষাৎকার : এস. এম. আব্রাহাম লিংকন

২৫. তাজুল মোহাম্মদ, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের খোঁজে কুড়িগ্রাম’, সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, অক্টোবর, ২০০৮, পৃ. ৭৮

২৬. কর্নেল নূরুন্নবী খান, ‘জীবনের যুদ্ধ, যুদ্ধের জীবন’, সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ১৯৯৩, পৃ. ১১০

২৭. তাজুল মোহাম্মদ, প্রাগুক্ত, পৃ. ১০৫

২৮. কর্নেল নূরুন্নবী খান, প্রাগুক্ত, পৃ. ১১৩

২৯. এস. এম. আব্রাহাম লিংকন, মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস রংপুর, বাংলা একাডেমি, ঢাকা ২০১৪, পৃ. ১৬১ ৩০. লে. কর্নেল এস আই এম নূরুন্নবী খান বীরবিক্রম (বরখাস্ত), রৌমারী-রণাঙ্গন, কলম্বিয়া প্রকাশনী,

ঢাকা, ১৯৯৮, পৃ. ৫৫ ৩২. প্রাগুক্ত, পৃ. ৯২-৯৫

৩১. প্রাগুক্ত, পৃ. ৯১-৯২

৩৩. কাজী নুরুজ্জামান, ‘যুদ্ধের প্রাক্‌মুহূর্তে’, মুক্তাঞ্চল পাটগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা শীর্ষক স্মারকগ্রন্থ, প্রাককথন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, পাটগ্রাম, ২৮ মার্চ ২০০৬, পৃ. ৩৩ ৩৪. কাজী নুরুজ্জামান, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৩

৩৫. সাক্ষাৎকার জলিলুর রহমান, পিতা: জসিম উদ্দিন সরকার, মাতা: হাবিবুন্নেসা, গ্রাম: ঠেংঝাড়া, ইউনিয়ন: বড়খাতা, উপজেলা: হাতীবান্ধা, জেলা: লালমনিরহাট, তারিখ: ১৮,০৮, ২০১৫

৩৬. মো. আশরাফুল হক, ‘অচেনা পথ’, মুক্তাঞ্চল পাটগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ, প্রাককথন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, পাটগ্রাম, ২৮ মার্চ ২০০৬, পৃ. ৪৪

বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস চতুর্থ খণ্ড (চতুর্থ পর্ব)

৩৭. বদরুন নাহার তানি, ‘৭১’-এ পাটগ্রামের নারী সমাজ’, মুক্তাঞ্চল পাটগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ, প্রাককথন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, পাটগ্রাম, ২৮ মার্চ ২০০৬, পৃ. ৮৩

৩৮. মো. আবিদ আলী, ‘মুক্তিযুদ্ধের পাটগ্রাম’, মুক্তাঞ্চল পাটগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ, প্রাককথন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, পাটগ্রাম, ২৮ মার্চ ২০০৬, পৃ. ২৭ ৩৯. মো. আশরাফুল হক, অচেনা পথ, মুক্তাঞ্চল পাটগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা শীর্ষক স্মারক

গ্রন্থ প্রাককথন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, পাটগ্রাম, ২৮ মার্চ ২০০৬, পৃ. ৪৪ ৪০. মো. আবিদ আলী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩২

৪১. লালচান রজক, ইতিহাস লেখা কেন?, মুক্তাঞ্চল পাটগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ, প্রাককথন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, পাটগ্রাম, ২৮ মার্চ ২০০৬, পৃ. ৩৬ ৪২. অধ্যক্ষ (অব.) প্রফেসর মো. আবু আইয়ুব প্রধান, কিছু স্মৃতি কিছু কথা, মুক্তাঞ্চল পাটগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ প্রাককথন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, পাটগ্রাম, ২৮ মার্চ ২০০৬, পৃ. ৪০

৪৩. সায়েদুল ইসলাম মিঠু, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ, মুক্তাঞ্চল পাটগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ, প্রাককথন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, পাটগ্রাম, ২৮ মার্চ ২০০৬, পৃ. ২ ৪৪. সাক্ষাৎকার, শাহজামাল তোতা, পিতা: মৃত শাহাদাৎ হোসেন (মাস্টার), মাতাঃ মৃত জুবেদা খাতুন, রসুলগঞ্জ, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট, ভারিখ ১৭.০৮.২০১৫, সময় সন্ধ্যা ৭.০০টা, ঢাকা

৪৫. মো. মোজাম্মেল হক, ‘বিপ্লবী সাংস্কৃতিক পরিষদ, মুক্তাঞ্চল পাটগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা

শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ, প্রাককথন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, পাটগ্রাম, ২৮ মার্চ ২০০৬, পৃ. ৮২

৪৬. আবু বক্কর সিদ্দিক প্রধান, ‘কেন এই যুদ্ধ’, মুক্তাঞ্চল পাটগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা শীর্ষক

স্মারক গ্রন্থ, প্রাককথন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, পাটগ্রাম, ২৮ মার্চ ২০০৬, পৃ. ৮১

৪৭. মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন, পিতা: মহিউদ্দিন আহমেদ, মাতা: সনজিদা খাতুন, রসুলগঞ্জ, পাটগ্রাম,

লালমনিরহাট, তারিখ: ১৭.০৮.২০১৫, সময় : রাত ৮.০০টা

৪৮. সাক্ষাৎকার, শাহজামাল তোতা, পিঅ মৃত শাহাদাৎ হোসেন (মাস্টার), মাতা: মৃত জুবেদা খাতুন, রসুলগঞ্জ, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট, তারিখ: ১৭.০৮.২০১৫, সময় সন্ধ্যা ৭.০০টা, ঢাকা ৪৯. মো. আনোয়ারুল ইসলাম নাজু, ‘অন্তরে অনির্বাণ’, মুক্তাঞ্চল পাটগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা শীর্ষক স্মারকগ্রন্থ, প্রাককথন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, পাটগ্রাম, ২৮ মার্চ ২০০৬, পৃ. ৮৯

৫০. বদরুন নাহার তানি, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮৫

৫১. মো. আবিদ আলী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩১ ৫২. মো. আবিদ আলী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩১

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :

3. রুহুল আমিন বাবুল, পিতাঃ মৃত আমিনুর রহমান, মাতাঃ আমিনা বেগম, রসুলগঞ্জ, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট

২. মো. আশরাফুজ্জামান মন্ডল, পিতাঃ মো. শহীদুল ইসলাম মন্ডল, মাতা মোছা. আখতারা বেগম, গ্রাম: রামজীবন, ডাকঘর: ভোলারচওড়া, উপজেলা ও জেলা: লালমনিরহাট

আরও পড়ুন:

Leave a Comment