সামনে জনযুদ্ধ, চাই সশস্ত্র প্রস্তুতি [ স্বাধীনতা ‘৭১ ] কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম

সামনে জনযুদ্ধ, চাই সশস্ত্র প্রস্তুতি : শেষপর্যন্ত ওরা বাঙালিজাতির সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতাই করল। মধ্যরাতের নিঃসীম থমথমে অন্ধকারে নিরস্ত্র দুর্জয় বাঙালিজাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল বর্বর হানাদারবাহিনী। বাংলার রাজধানী ঢাকায় বিশ্ব ইতিহাসের সবচাইতে নির্মম ও জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হলো বিংশ শতাব্দীর শেষপাদে একাত্তর সালের পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতে।

সারাদিন ঢাকা ছিল অশান্ত-উদ্বেল। দুর্বার-দুর্জয় জনতা মিটিঙে-মিছিলে-শ্লোগানে মুখরিত করে রেখেছিল ঢাকার অলি-গলি-রাজপথ। আর নাৎসীবাহিনীর ভয়ঙ্কর মুখোস এঁটে সশস্ত্র পশ্চিমা কুকুরবাহিনী মেশিনগানের ব্যারেল উঁচিয়ে টহল দিয়ে ফিরছিল সারা শহর। হানাদার বর্বরদের ব্যারেলের মুখে বাংলার নিরস্ত্র বীর ছাত্র-জনতা শোভাময় রমনার রাস্তায় রাস্তায় গড়ে তুলেছে ব্যারিকেড।

সামনে জনযুদ্ধ, চাই সশস্ত্র প্রস্তুতি [ স্বাধীনতা '৭১ ] কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম - Kader Siddique, Bir Uttom [ কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম ]
Kader Siddique, Bir Uttom [ কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ]

[  সামনে জনযুদ্ধ, চাই সশস্ত্র প্রস্তুতি [ স্বাধীনতা ‘৭১ ] কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম ]

ধীরে ধীরে রাত নেমে এল। রাজধানী ঢাকায় নিঃশব্দে নেমে এল অন্ধকার। সারাদেশে উথালপাথাল রাজৈ তিক অস্থিরতা। মার্চের শুরু থেকেই দেশবাসীর মনে উৎকণ্ঠা, অবিশ্বাস আর সন্দেহ দোল খাচ্ছিল– সেই উৎকণ্ঠা আর অবিশ্বাস এখন হয়েছে তীব্রতর। সবার মনে প্রশ্ন—খুনী ইয়াহিয়া শেষতক কথা রাখবে তো? কী বলবে সে বেতারে?

পঁচিশে মার্চের রাত ক্রমশ গভীর হয়ে এল, একসময় বন্ধ হয়ে গেল বেতার-প্রচার। অথচ সরকারি ঘোষণা প্রচারিত হলো না। জনতার উৎকণ্ঠা আরো বেড়ে গেল। এই সীমাহীন উৎকণ্ঠা ও গভীর উদ্বেগের মধ্যেও স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতা তাদের প্রস্তুতি চালিয়ে গেলেন। বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মীদের নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নির্দেশ দিলেন।

মধ্যরাত পার না হতেই বাংলার দুর্জয় বীর-জনতার ব্যালটের রায় বুলেটে প্রতিহত করতে বর্বর পাকিস্তানবাহিনী ট্যাঙ্ক, মেশিনগান, কামান ও সঁজোয়াগাড়ি নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলিতে নির্বিচারে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসা ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া বহরকে নিরস্ত্র বীর-জনতা যেভাবে পারলেন বাধা দেবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার দুর্বল বাধা দানবীয় পশুদের বেশিক্ষণ ঠেকাতে পারল না।

পশু-শক্তি ট্যাঙ্ক, কামান, মেশিনগান ও স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে নির্বিচারে অবিরাম গোলাগুলি বর্ষণ করতে করতে ছড়িয়ে পড়ল সারা শহরে। শতশত বছরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যশালী ঐতিহাসিক ঢাকা নগরী দানবীয় বাহিনীর একতরফা আক্রমণের বিভীষিকায় নিমজ্জিত হলো। চারদিকে শুধু প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকাণ্ড, ধ্বংস আর মর্মস্তূদ মৃত্যু-চিৎকার। আগুনের লেলিহান শিখা আর বর্বর সেনাবাহিনীর মনোভূমির মতো বিষাক্ত কালোধোঁয়ায় তলিয়ে গেল ঢাকা শহর।

বর্বর হানাদারবাহিনীর একটি বিশাল দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, সূর্যসেন হল, জগন্নাথ হল ও রোকেয়া হলে ট্যাঙ্ক, মেশিনগান ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলিতে নিহত হয় অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী। রোকেয়া ও শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীরাও পশুদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। প্রাণ ও ইজ্জত বাঁচাতে ছাত্রীরা হলের বিভিন্ন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দেয়।

ছাত্রীবাসের প্রতিটি কক্ষ তল্লাসি চালিয়ে শতশত ছাত্রীর ইজ্জত লুঠ করে নির্মমভাবে বেয়োনেটে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে তাদের। শুধু ছাত্র-ছাত্রীরাই নয়; ঢাকা ও দেশের অন্যত্র শিক্ষক, অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ, শ্রমিক ও সর্বস্তরের অসংখ্য মানুষ হানাদারদের নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারায়। এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও কিছু ছাত্র-ছাত্রী ও জনতা কোনক্রমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাঁচেন।

Kader Siddique, Bir Uttom [ কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম ]
Kader Siddique, Bir Uttom [ কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম ]
পঁচিশে মার্চের সেই ক্রুর কালোরাতে হানাদাররা প্রচণ্ড বাধা পায় পিলখানার ই-পি-আর ব্যারাক ও রাজারবাগের পুলিশলাইনে। বীর বাঙালি পুলিশ ও ই-পি-আর বাহিনী হানাদারদের প্রথম আক্রমণের দাঁতভাঙা জবাব দেয়। বলতে গেলে পিলখানা ও রাজারবাগেই স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সারারাতব্যাপী ই-পি-আর ও পুলিশবাহিনী হানাদারদের অত্যাধুনি ভারি ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের মুখে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে।

হানাদারদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রতিরোধ-যুদ্ধে ভোরের দিকে গোলাবারুদ ফুরিয়ে এলে এবং হানাদার বর্বররা নতুন শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে ই-পি-আর ও পুলিশরা আরো ব্যাপক প্রতিরোধ-যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। পঁচিশে মার্চের অভিশপ্ত কালরাতেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা বাংলায় তিন থেকে পাঁচলক্ষ মানুষ হানাদারদের বর্বর আক্রমণে শহীদ হন।

বাংলার স্বাধীনতাযুদ্ধে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ ও আওয়ামী লীগ সহ অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও গণসংগঠনগুলি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষত রাজনৈতিকভাবে সুশিক্ষিত প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর ভূমিকাই স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছে। আপোস আলোচনার অজুহাতে ইয়াহিয়া যখন সময় কাটাচ্ছিল, তখন বাংলার ঘরে-ঘরে ব্যাপক অবিশ্বাস ও সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছিল। ছাত্র-শ্রমিক সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই বুঝে নিয়েছিল, পশ্চিম-পাকিস্তানী কায়েমী স্বার্থবাদী-চক্র বাঙালির ন্যায্য অধিকার আপোসে ছেড়ে দেবে না।

কারণ এই কায়েমী স্বার্থবাদী সাম্রাজ্যবাদী-চক্র যুগ-যুগ ধরে বাঙালিকে শোষণ করে ফুলেফেঁপে উঠেছে। বাঙালির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নিজেদের স্বার্থহানি ঘটাতে পারেনা তারা। ফলে যুদ্ধ যে অনিবার্য, সচেতন কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা তা বুঝে নিয়েছিলেন। কৃষক শ্রমিক-ছাত্র-জনতার মতো বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর চিন্তাও একই খাতে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই সময়কার অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার চিন্তা-চেতনার সঙ্গে জনতার চিন্তা-চেতনার তেমন কোন সঙ্গতি ছিল না। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন একমাত্র নেতা যাঁর চিন্তা-চেতনা জনতার স্বপ্ন-চৈতন্যের সঙ্গে ছিল সঙ্গতিপূর্ণ। জনগণের সঙ্গে ছিল তাঁর নাড়ির বন্ধন। জনতার প্রাণের দাবি মনের কথা বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে আপনি ধ্বনিত হতো।

ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ-বেদনা, ক্ষুধা ও দারিদ্রের কথা নিজের কণ্ঠে ধারণ করে বাংলার মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন। তখন থেকেই সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, হাসি-কান্না ও সুখ দুঃখের মূর্ত প্রতীক বলে ভাবতে ও বিশ্বাস করতে শুরু করেন। এসব কারণেই পঁচিশে মার্চ পর্যন্ত বাংলার ঘরে ঘরে উদ্বেগ, সন্দেহ ও বিভাষী-বিজাতীয় সামরিক শাসকদের প্রতি যে পুঞ্জীভূত ঘৃণার বাতাস বইছিল, বঙ্গবন্ধু সে বাতাসে কান পেতে অশনি সংকেত শুনতে পাচ্ছিলেন।

পঁচিশে মার্চ রাতে যখন হানাদার বর্বরবাহিনী রাজধানীসহ সারাদেশে ট্যাঙ্ক, কামান ও সাঁজোয়া গাড়ির বহর নিয়ে স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙালিদের উপর আদিম বন্য প্রতিহিংসায় ঝাঁপিয়ে পড়ে গণতন্ত্র ও বিশ্বমানবিকতার ললাটে কলঙ্কচিহ্ন এঁকে দিয়ে শতাব্দীর নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের সূচনা করে, তখন সারা বাংলা স্বাধীনতা অর্জনের নেশায় উন্মত্ত, শপথে প্রদীপ্ত।

অতীতের যে-কোন আন্দোলনের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামেও টাঙ্গাইল পিছিয়ে থাকেনি। তখন আমি টাঙ্গাইল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং টাঙ্গাইল জেলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পয়লা মার্চ থেকে সারাদেশে ‘জয় বাংলা বাহিনী’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে, জেলায়-মহকুমায় ‘জয় বাংলা বাহিনী’ গঠিত হয়েছে। এই বাহিনীর কাছে কোন অস্ত্র ছিল না সত্য, তবে পৃথিবীর যে কোন সশস্ত্র সুশৃঙ্খল বাহিনীর চাইতে নিঃসন্দেহে ত্যাগ-সাহসিকতা ও আত্মবলিদানের উৎসাহ অনেকগুণ বেশি ছিল।

এর প্রমাণ, ন’মাসের যুদ্ধে সাড়ে সাতকোটি বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল বিজয়। টাংগাইলে তখন ‘জয় বাংলা বাহিনী’ গঠিত হয়েছে এবং এর মূল নেতৃত্বে ছিলেন টাংগাইলের জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোহাম্মদ এনায়েত করিম। আমি একজন অন্যতম সংগঠক মাত্র। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ মাঠে দীর্ঘ একমাস ধরে ‘জয় বাংলা বাহিনীর প্রায় শ’চারেক সদস্যের প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। ধরেরবাড়ির জয়নাল আবেদীন ছিলেন এই বাহিনীর প্রশিক্ষক।

প্রশিক্ষণের মান ও ব্যবস্থা অবশ্য উন্নত ছিল না। প্রশিক্ষণ মানে শুধু বাম-ডান করানো, বন্দুক ধরা ও কিভাবে গুলি ছুড়তে হয় তার একটা সাধারণ ধারণা দেওয়া। প্রশিক্ষণকালে সংগঠন ও উদ্যোক্তাদের কাছে সত্যিকার রাইফেল ও বন্দুক খুব একটা ছিল না। এন.সি.সি. ক্যাডেটদের কাঠের রাইফেল দিয়েই প্রশিক্ষণ চলত। কখনো কখনো অবশ্য সুহৃদ পুলিশ ও আনসাররা দু’একটা সত্যিকার রাইফেল ধার দিয়ে প্রশিক্ষণ সাহায্য করেছেন।

১৫ মার্চের পর অবস্থার সামান্য উন্নতি ঘটে। সকল প্রশিক্ষণকেন্দ্রেই তখন কয়েকটা করে সত্যিকার রাইফেল দেওয়া সম্ভব হয়। জয় বাংলা বাহিনী’র সদস্যরা হাতিয়ার চালানোর প্রশিক্ষণই শুধু দিয়েছিলেন, গুলি ছুড়বার সুযোগ পাননি। কারণ আমাদের হাতে কোন গুলি ছিল না।

On January 24 in 1972, Kaderia Bahini leader Abdul Kader Siddique surrenders arms of his fellow freedom fighters to Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman at Bindubasini Boys High School ground in Tangail
On January 24 in 1972, Kaderia Bahini leader Abdul Kader Siddique surrenders arms of his fellow freedom fighters to Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman at Bindubasini Boys High School ground in Tangail

পঁচিশে মার্চ পর্যন্ত অনেক জাতীয় নেতা ও ব্যক্তিবর্গ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন। তাঁরা তখনো ভাবছিলেন হয়তো নিয়মতান্ত্রিক শলাপরামর্শ ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হবে। ভাবছিলেন অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে নড়াচড়া ও ঘোরাফেরা করলে পরিস্থিতি শান্ত হবার পর নিদারুণ অসুবিধায় পড়তে হতে পারে। অনেকের এমন ধারণাও ছিল, এখন যেসব পুলিশ ও আনসার উপযাচক হয়ে প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র দিচ্ছেন, অবস্থা পরিবর্তন হলেই তাঁরাই অনেককে বেআইনি অস্ত্র ব্যবহারের দায়ে জেলে পুরবেন।

এটা সত্য যে, দুর্জনের হলের অভাব হয় না। অনেক নেতার চিন্তা ছিল একবার অস্ত্র হাতে নিলে লক্ষ্যে না-পৌছা পর্যন্ত তা হাতছাড়া করার উপায় থাকবে না। এসব কারণে অনেক বড় বড় নেতারা তখন পর্যন্ত খুব একটা আগ্রহভরে এগিয়ে আসেননি। অপেক্ষা কর এবং দেখ’—এই নীতিতে যতটা না করলেই নয়। ততটাই করছিলেন। অথচ ছাত্র-জনতা পরিষ্কার বুঝে গেছেন সাপ মারতে যেমন লাঠি চাই, তেমনি সশস্ত্র লড়াই ছাড়া উদ্ভূত সংকট সমাধানের কোনও পথ নেই। টাংগাইলে তখন একদিকে যেমন এ ধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, অন্যদিকে তেমনি প্রতিরোধ যুদ্ধের জোর প্রস্তুতি চলছে।

এই পটভূমিতে পঁচিশে মার্চ বসন্তের মধ্যরাতে বাংলার শাশ্বত শান্তরূপকে তছনছ করে রূপসী বাংলাকে ক্ষত-বিক্ষত করে যখন পাকিস্তানী হানাদাররা শান্তিপ্রিয় নিরস্ত্র নিদ্রামগ্ন বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নজিরবিহীন গণহত্যা চালায়, তখন সারাদেশের মতো টাংগাইলেও এর গুরুতর প্রতিক্রিয়া হয়।

ছাব্বিশে মার্চ সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষ উদ্ভ্রান্তের মতো টাংগাইলের দিকে ছুটে আসতে থাকে। বন্যার মতো ছুটে আসা ছিন্নমূলদের মধ্যে নারী-পুরুষ, যুবা-বৃদ্ধ-শিশু সবাই রয়েছে। তাঁদের দিশেহারা আতঙ্কগ্রস্ত চোখ-মুখের দিকে তাকানো যায় না। তাঁদের ভীত-সন্ত্রস্ত আতঙ্কিত হাবভাব দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোন হিংস্র নর-খাদক তাঁদের পিছু ধাওয়া করেছে। ঢাকা থেকে ষাট মাইল এসেও তাঁরা নিরাপদ বোধ করছিলেন না, যত শিগগির-সম্ভব আরো দূরে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছিলেন।

এই দলে এমন অসংখ্য মানুষ ছিলেন যাঁরা জানেন না কেন তাঁরা পালাচ্ছেন, কেন তাঁরা ছুটছেন। তবু ছুটবার বিরাম নেই। যেন যতক্ষণ ছুটবেন ততক্ষণই জীবন, থেমে গেলেই অবধারিত মৃত্যু। ঢাকার খবর জিজ্ঞাসা করলে অনেকেই উত্তর দিতে পারছিলেন না। ঠোঁট শুকিয়ে গেছে, জিহ্বা বেরিয়ে এসেছে, বিস্ফারিত চোখ ফেটে পড়তে চাইছে। ক্লান্ত অভুক্ত নিদ্রাহীন দেহ বিদ্রোহ ঘোষণা করতে চাইছে, হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন, উঠে আবার ছুটছেন। শুধু ছুটে পালাচ্ছেন পেছনে ধাবমান মৃত্যুর কুৎসিত নৃশংস থাবা এড়িয়ে।

এঁদের মধ্যে যাঁরা একটু সাহসী তাঁদের কেউকেউ অতিকষ্টে দ্রুতকণ্ঠে জানালেন, ঢাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ইউনিভার্সিটি নেই। পিলখানা রাজারবাগে তুমুল যুদ্ধ হচ্ছে। পিলখানায় হানাদারবাহিনী ঢুকতে পারেনি। ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় জল্লাদবাহিনী যাকে পাচ্ছে তাকেই খতম করছে। রাজপথ রক্তে লাল। ট্যাঙ্ক ও কামানের গোলায় ঘরবাড়ি মাটিতে মিশে যাচ্ছে। ঘরে ঘরে ঢুকে মিলিটারিরা সবাইকে গুলি করে এবং বেয়োনেটে খুঁচিয়ে হত্যা করছে।

ঢাকার দিক থেকে প্রাণভয়ে ভীত পলায়নপর মানুষদের দেখে এবং তাঁদের কাছে এইসব সংবাদ শুনে ক্ষোভে-দুঃখে আমি মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলাম।।

Kader Siddique, Bir Uttom [ কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম ]
Kader Siddique, Bir Uttom [ কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম ]
এসময় একজন বুক চাপড়ে আহাজারি দৌড়ে গেলাম। লোকটিকে জিজ্ঞাস করলাম, —কী হয়েছে ভাই? করছেন কেন? লোকটির দিয়ে আওয়াজ বেরুতে চাচ্ছিল অঝোরে কাঁদছে চাপড়াচ্ছে,

যেন হয়ে গেছে। অনেক সান্ত্বনা দেওয়ার পর ভদ্রলোক খুললেনঃ

—কী বলব! শেষ হয়ে গেছে। আমার বাসা ধানমণ্ডিতে। বঙ্গবন্ধুর বাসার পাশেই। রাত বারোটার পর একদল সেনা এসে বঙ্গবন্ধুর বাসা ঘিরে ফেলে নির্বিচারে চালাতে থাকে। গুলির আঘাতে বাসার ইট একটার পর একটা খসে পড়তে থাকে। হঠাৎ মাইক্রোফোনে শোনা গেল বঙ্গবন্ধুর গলা,

—তোমরা কারা? তোমরা পেয়েছ কী? গুলি বন্ধ  করো।

সত্যিই গুলি হয়ে গেল। উৎসুক হয়ে উঠলাম। দেখলাম দোতলা ধীর পায়ে নিচে নেমে হানাদারদের সামনে বললেন, —তোমরা পেয়েছ কী? পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। তোমরা এভাবে মরো বাড়িতে গুলি পারো না।

এসময় হানাদার নেতা, খুব সম্ভবত কর্নেল, বঙ্গবন্ধুকে বলল:

—আমরা আপনাকে গ্রেফতার করে নিয়ে

Google News
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

—কোথায়? —ক্যান্টনমেন্ট।

-আমাকে গ্রেফতার করতে হলে, অন্তত ‘আই-জি’র উপস্থিত বাঞ্ছনীয়। এটাও কি তোমরা ভুলে গেছ?

এসময় কয়েজন অফিসার ও বঙ্গবন্ধুকে বন্দুকের বাঁট ও নল দিয়ে ঠেলা ও মারছিল। হানাদারদের দুর্ব্যবহারে আমি অঝোরে কেঁদে ফেলি। বঙ্গবন্ধু গর্জে উঠেন,

—তোমরা অভদ্রতা বন্ধ করো।

হানাদার নেতার হস্তক্ষেপে তারা বিরত হয়। হানাদাররা বঙ্গবন্ধুকে জোর জিপে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। আল্লাহ জানেন, এখন কোথায়। আল্লাহ বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা কর। লোকটার কথা শুনে পাগলের মতো দৌড়ে জেলা পরিষদ অফিসের সামনে গিয়ে হানাদার বর্বরোচিত গণহত্যা প্রতিরোধকল্পে অপরিকল্পিতভাবে এক বক্তৃতা বসলাম। মাইক্রোফোনের সামনে ঘৃণা আক্রোশে ফেটে চিৎকার করে উঠলাম

“আমাদের পাকিস্তানী খুনীবাহিনী ট্যাঙ্ক, কামান মেশিনগান ঝাঁপিয়ে পড়েছে। হাজার-হাজার, লাখো লাখো মানুষকে ওরা করেছে। রক্তের বন্যায় সারাদেশ ভাসিয়ে দিচ্ছে। এই রক্তের জবাব রক্ত দিয়েই দিতে হবে। জবাবে রক্ত চাই। দীর্ঘ বৎসর ওরা তিলতিল করে শোষণ মেরেছে। সভ্যজগতের রীতিনীতি অগ্রাহ্য বর্বরতার পরাকাষ্ঠা নিরপরাধ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের যে-পৈশাচিক দানবীয় থাবা হেনেছে, সেই নৃশংস কালো হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে না বাঙালিজাতির অস্তিত্ব চিরদিনের জন্য বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

আমাদের প্রমাণ করতে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতির কাছে দানবীয় পশুশক্তি হার মানতে আপনারা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানের কথা করুন, ‘যার যা আছে, তাই নিয়ে মোকাবেলা করতে আমরা ওদের ভাতে মারব, পানিতে মারব, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমতো আমাদের ঘরে ঘরে গড়ে তুলতে হবে। জীবন দিয়েও নির্দেশের মর্যাদা রক্ষা করতে আসুন আমরা শপথ নেই, জীবন দেব, অধিকার দেব না, কোনও শক্তির কাছে নোয়াব

“জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।”

Kader Siddique Bir Uttom with Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman 4 সামনে জনযুদ্ধ, চাই সশস্ত্র প্রস্তুতি [ স্বাধীনতা '৭১ ] কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সাথে কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম [ Kader Siddique Bir Uttom with Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman]
এটা সত্য, এই বক্তৃতার আগে কারো সাথে কোন পরামর্শ করিনি। যুদ্ধশেষে আমার অবস্থান থেকে এটা বিচার করলে হয়তো তেমন বেমানান এবং গুরুতর ব্যাপার মনে হবে না। তবে যুদ্ধের শুরুতে নেতৃবৃন্দের কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা না-করে ঐ ধরনের বক্তৃতা করাটা আমার জন্য প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এমনিতেই শতশত ছিন্নমূল মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলাম। তার উপর সত্য হোক, মিথ্যা হোক, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে খবর শোনার পর আমার মাথা ঠিক ছিল না। সত্যিকার অর্থেই হয়তো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।

২৬ মার্চ সকাল দশটায় আদালতপাড়ার নূরুল ইসলাম এ্যাড্‌ভোকেটের বাড়িতে উদ্ভূত পরিস্থিতির মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এক সর্বদলীয় সভা বসে। এই সভায় স্বাধীনতাকামী কমবেশি সব দলের নেতা ও প্রতিনিধি উপস্থিত হন। বদিউজ্জামান খানকে সভাপতি করে সভার কাজ শুরু করা হয়। সভার শুরুতে টাংগাইলের বিখ্যাত শ্রমিকনেতা সৈয়দ আব্দুল মতিন প্রস্তাব করেন, “বর্তমানে আমাদের জেলার সমস্ত প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিয়ে সবকিছু পরিচালনা করা উচিত। এখন আমাদের প্রধান কাজ হবে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত একটি মুক্তিবাহিনী গঠন করা। কারণ ঢাকার দিকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে টাঙ্গাইল আর দু’একদিনও নিরাপদ থাকবে না।

পাকিস্তান জন্মাদবাহিনী আমাদের প্রিয় জেলায় প্রবেশ করলে ঢাকার মতো এখানেও হত্যা ও ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা চালাবে। তাই আমাদের সবার কর্তব্য ওদের গতিরোধ করা।” এরপর আর-একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি দৃঢ়তার সাথে বলেন, “কথা বলে সময় নষ্ট করা এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর এখন এমন একটা কমিটি গঠন করা উচিত, যে-কমিটি জেলার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হবে। ডি.সি., এস.পি-কে ডাকা হোক। আমাদের এই কমিটির নির্দেশ অমান্য করলে প্রয়োজনে শাস্তির বিধান করা যেতে পারে।” এইধরনের অসংখ্য প্রস্তাব নানাজনে তুলতে থাকেন।

তবে মূল প্রস্তাব একটাই—সশস্ত্র প্রতিরোধ-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে এবং তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। কমবয়সী কয়েকজন এও বললেন, “বঙ্গবন্ধু তো বলেই দিয়েছেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা সবকিছু বন্ধ করে দিবে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমতো নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরকেই করতে হবে। বঙ্গবন্ধু আরও বলেছেন যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’। এই নির্দেশের পরও শত্রুর মোকাবেলা করতে নিশ্চয়ই আমাদের দ্বিধা থাকতে পারে না।”

একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে টাংগাইলের প্রশাসনব্যবস্থা হাতে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন আওয়ামী লীগের জেলা সম্পাদক মীর্জা তোফাজ্জল হোসেন (মুকুল) প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে সমবেতদের বললেন, “হ্যা বঙ্গবন্ধু বলেছেন, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা সবকিছু বন্ধ করে দিবে— তার অর্থ এই বলেন নাই যে, আপনারা সমস্ত ক্ষমতা হাতে নিয়ে নেবেন। আমি আপনাদের সাথে একমত নই।

তাছাড়া আর একটা কথা আছে—ঢাকা থেকে নির্দেশ না এলে আমি কিছুতেই কিছু করতে পারব না।” এইসময় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোহাম্মদ এনায়েত করিম লাফিয়ে উঠে বললেন, “রাখেন এম.পি. সাহেব, ঢাকার সব মানুষকে মাইরা ফালাইছে, আর আপনি নির্দেশের জন্য বইসা রইছেন। সত্য কথা কন, আপনি ডরাইছেন।” এ কথা শুনে এম.পি. সাহেব রুদ্রমূর্তি ধরে বিকট চিৎকার করে উঠেন, “আমার কথার মধ্যে তুমি করিম… কথা বলার কে? জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে আইন পাশ করার জন্য, যুদ্ধ করার জন্য নয়। আর আপনারা যে এখন বীরগিরি দেখাইতেছেন, মিলিটারি আসলে আপনাদের কী দশা হবে ভেবে দেখেছেন? আর দেখেন তো!

কাদের সিদ্দিকী একটু আগে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে যে বক্তৃতা করল, তার জন্য কে দায়ী হবে? ঐরকম বক্তৃতা করার আগে সে কার অনুমতি নিয়েছে? যে যার মতো দেখছি সবাই হঠাৎ মাতব্বর হইয়া গেছে। আপনাদের এই হঠকারিতার জন্য টাংগাইলের কোন ক্ষতি হলে আপনারাই দায়ী থাকবেন। আমি আপনাদের সাথে একমত নই, তাই আমি এই সভা ত্যাগ করলাম।” মীর্জা তোফাজ্জল হোসেন রেগেমেগে গজগজ করতে করতে সভা ত্যাগ করলে সকলে একমত হয়ে একজন চেয়ারম্যান ও একজন আহ্বায়কসহ কয়েকজন সদস্যের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে নিম্নলিখিত প্রস্তাব নেনঃ

(১) এই কমিটি হবে জেলার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।

(২) এই কমিটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সংগ্রাম কমিটির আদেশ-নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করবে।

(৩) এই কমিটির নাম হবে– টাঙ্গাইল জেলা স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ।

(8) এই পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সুসংগঠিত শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী গঠন করা হবে।

(৫) সশস্ত্রবাহিনীর নেতৃত্ব থাকবে সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের উপর। তিনি স্বয়ং অথবা অন্য কাউকে, অথবা করে জন মনোনীত করে যুদ্ধ পরিচালনা করবেন। যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবেন।

(৬) সশস্ত্রবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা পরিষদের অনুমোদন ছাড়া কোন কাজ রূপায়িত করতে পারবে না।

(৭) কমিটি গঠনের মুহূর্ত থেকে টাঙ্গাইল জেলার সমস্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব, আপনা আপনি এই কমিটির উপর বর্তাবে।

(৮) বদিউজ্জামান খান চেয়ারম্যান ও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী সর্বসম্মতিক্রমে এই কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হলে পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে পদাধিকার বলে সশস্ত্র গণবাহিনীর সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হলো। এই সভায় টাঙ্গাইল জেলা স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদে অন্য কয়েকজন সদস্যকে নির্বাচিত করা হলো। সদস্যবৃন্দ হলেন:

(১) ন্যাপের সৈয়দ আবদুল মতিন, (২) জাতীয় লীগের জনাব আল-মুজাহিদী, (৩) মোটর এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হবিবুর রহমান হবি মিয়া, (৪) শামসুর রহমান খান (শাজাহান), (৫) ফজলুর রহমান খান (ফারুক), (৬) এড্‌ভোকেট নুরুল ইসলাম, (৭) আলী আকবর খান খোকা ও (৮) বীরেন্দ্র কুমার সাহা।

পরিষদের একজন উপদেষ্টা মনোনয়ন করা হলো। তিনি হলেন তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব খোন্দকার আসাদুজ্জামান (মঞ্জু)। সভাশেষে তাৎক্ষণিকভাবে পরিষদের স্থায়ী কার্যালয় হিসাবে টাংগাইলের পুরানো কোর্টবিল্ডিং বেছে নেওয়া হল এবং মাইক্রোফোনে শহরের সর্বত্র সভায় গৃহীত প্রস্তাবসমূহ প্রচার করে দেওয়া হলো। পরিষদের ঘোষণা শুনে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। অনেকে আনন্দিত হলেন। কেউ-কেউ প্রকাশ্যেই বললেন, ‘আমাদের নেতারা তাহলে ভেঙে পড়েননি। হানাদারদের মোকাবেলা করার শক্তি সাহস ও মনোবল সবই তাদের আছে।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment