‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব – এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ’ [ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ] আবেদ খান

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব – এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ”। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের বিভিন্ন অংশ নিয়ে লিখেছেন দেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীগণ। “রক্ত-যখন-দিয়েছি, রক্ত-আরও০দেব – এদেশের-মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ” বাক্যটি নিয়ে লিখেছেন আবেদ খান।

‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব - এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ' [ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ] আবেদ খান
Bangabandhu 7th March Speech, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ

রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব – এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ

খ্রিষ্টপূর্ব অর্ধ সহস্র বৎসর আগে থেকে অদ্যাবধি বিশ্বের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে যে কয়েকজন বিশ্বনায়ক অনলবর্ষী ভাষণের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের যাত্রাপথে নতুন স্রোত-ধারা সৃষ্টি করেছিলেন তাঁদের মধ্য থেকে একচল্লিশ জনের একচল্লিশটি যুগসৃষ্টিকারী ভাষণ নিয়ে একটি সংকলন করেছেন ইতিহাসের পর্যবেক্ষক জ্যাকব এফ ফিল্ড।

পেরিক্লিস, আলেকজান্ডার, হ্যানিবল, জুলিয়াস সিজার, সালাদিন, নেপোলিয়ন, গ্যারিবল্ডি, আব্রাহাম লিঙ্কন, ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, এডলফ হিটলার, চার্চিল, মাও, রুজভেল্ট, স্টালিন, হো চি মিন প্রমুখ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ভাষণ সংকলিত হয়েছে গ্রন্থটিতে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের অমর কাব্যময় ভাষণটি সংযোজিত হয়েছে বিখ্যাত ওই সংকলন গ্রন্থে।

Bangabandhu 7th March Speech, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ
Bangabandhu 7th March Speech, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ

তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ওই ভাষণটি বিশ্ব ইতিহাসের অবিস্মরণীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে এজন্য যে, সমগ্র ভাষণের প্রতিটি পঙ্ক্তিতে, প্রতিটি শব্দপ্রয়োগে উঠে এসেছে একটি জাতির ইতিহাস, আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, ধারাবাহিক বঞ্চনা আর ঘুরে দাঁড়ানোর তথ্যাবলি ভাষণে আরও উঠে এসেছে বাঙালির আত্মান্বেষণের প্রেরণা, ত্যাগ ও রক্তপাতের কথা; উচ্চারিত হয়েছে মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জনগণকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান, কোন কৌশলে যুদ্ধ ও জনযুদ্ধ পরিচালিত হবে তার নির্দেশনা। এছাড়া ঘোষণা করা হয়েছে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য সর্বাত্মক ত্যাগ স্বীকারের বজ্রশপথ।

“তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ওই ভাষণটি বিশ্ব ইতিহাসের অবিস্মরণীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। এইজন্য যে, সমগ্র ভাষণের প্রতিটি পঙক্তিতে, প্রতিটি শব্দপ্রয়োগে উঠে এসেছে একটি জাতির ইতিহাস, আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, ধারাবাহিক বঞ্চনা আর ঘুরে দাঁড়ানোর তথ্যাবলী ।”

জ্যাকব এফ ফিল্ড তাঁর বিখ্যাত ওই সংকলন ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস’-এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ই-মার্চের মহাকাব্যিক ভাষণের সেসব দিকের প্রতি আলোক প্রক্ষেপণ করেছেন যে দিকগুলো একটি জাতিকে আবিষ্কার করার আত্মশক্তিকে সুসংবদ্ধ করে চূড়ান্ত ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। জ্যাকব ফিল্ড তিন হাজার বছরের ইতিহাস থেকে চয়ন করেছেন সর্বকালের বিখ্যাত বিশ্বনায়কদের শ্রেষ্ঠ ভাষণের সেইসব স্বর্ণময় অংশ, যা ইতিহাসেরই গতিমুখ পাল্টে দেয়, জাতিকে জাগিয়ে তোলে কিংবা জাতির জন্ম অনিবার্য করে।

Bangabandhu 7th March Speech, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ
Bangabandhu 7th March Speech, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ

সংকলনে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ অবধারিতভাবে এসেছে এই কারণে যে, ভাষণটি ছিল সেই সময়কার যখন অস্বাভাবিক এবং অপরিণামদর্শী একটি রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে সেই রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আত্মিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। অবিসংবাদিত একজন গণদেবতা নিপুণ দক্ষতায় তিল তিল করে একের পর এক ইতিহাস তৈরি করার পর চূড়ান্ত একটি বার্তা পৌঁছে দিলেন গণমানুষের মনোভূমিতে, মাত্র উনিশ মিনিটের কতিপয় বাক্যবিন্যাসের মধ্য দিয়ে। এই জন্য এই ভাষণটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল যে, এর ভেতর দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের বীজ উপ্ত হয়েছিল, ঘোষিত হয়েছিল একটি জাতি রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন – হাজার হাজার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বাঙালি জাতির সুনির্দিষ্ট ঠিকানার সন্ধান ।

জ্যাকব বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ একটি বাক্যকে অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে গ্রন্থিত করেছেন এভাবে- ‘Remember once we have shed our blood. We will not hesitate to shed more. But we will free the people of this country, InshaAllalh.’ আমরা বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ থেকে এই বাক্যটি শুনেছি এইভাবে ‘রক্ত-যখন-দিয়েছি, রক্ত-আরও-দেব – এদেশের-মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ ।।

কী ছিল এই বজ্রনিনাদী বাক্যে? ‘রক্ত-যখন-দিয়েছি’ শব্দত্রয়ীর মধ্যে আছে বাঙালি জাতির দীর্ঘকালীন সংগ্রামের ইতিহাস। সেখানে অতি সতর্কতার সঙ্গে ব্যক্ত হয়েছে বাঙালিকে মুক্তির লড়াইয়ে কতবার ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে তারই সংক্ষিপ্ততম উল্লেখ । আর শেষ বাক্যাংশের মধ্যে অধিকতর ত্যাগে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান এবং যে অনুচ্চারিত কথা বলা হয়েছে, তার মর্মবাণী হলো রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের শেষে আছে বিজয়ের রৌদ্রকরোজ্জ্বল রেখা

অত্যন্ত সংযত আবেগময় অথচ যুক্তিগ্রাহ্য এই ভাষণ কেবল সেদিনের বাঙালিচিত্তকেই অনুপ্রাণিত এবং উজ্জীবিত করেনি – পাল্টে দিয়েছে বিশ্বমানচিত্র, মানবজাতির যাত্রাপথে সূচিত হয়েছে নতুন একটি জাতিগোষ্ঠীর অভ্যুদয়

[ ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব – এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ’ [ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ]] 

লেখক: আবেদ খান
সম্পাদক, দৈনিক জাগরণ

‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব - এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ' [ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ] আবেদ খান
‘রক্ত-যখন-দিয়েছি, রক্ত-আরও-দেব – এদেশের- মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ’ [ বঙ্গবন্ধুর ৭ই- মার্চের ভাষণ ] আবেদ খান
আরও পড়তে পারেন :

Leave a Comment